রোহান ইসলাম আগে পিকআপ পয়েন্ট থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে অনলাইনে অর্ডার করা পণ্য সংগ্রহ করতেন। পরে বন্ধুদের কাছে জানতে পারেন, এখন ডেলিভারিম্যানের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না, লাইনে দাঁড়ানোরও ঝক্কি নেই, পণ্যই বরং অপেক্ষা করবে রোহানের জন্য। সরকারের অ্যাসপায়ার টু ইনোভেটের (এটুআই) নতুন উদ্যোগ ডিজিবক্স প্ল্যাটফর্ম গ্রাহকের জন্য অর্ডারের পণ্য পাওয়া অনেক সহজ করে দিয়েছে।
১১ অক্টোবর রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আইসিটি ভবনে ডিজিবক্স প্ল্যাটফর্মের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। দেশের অন্যতম বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দারাজ বাংলাদেশের পণ্য এখন ডিজিবক্সের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে। তবে দেশের অন্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানও চাইলে ডিজিবক্স সেবায় যুক্ত হতে পারবে।
ডিজিবক্স ঠিক কীভাবে কাজ করে, তা জানতে সম্প্রতি জিগাতলায় যান এই প্রতিবেদক। সেখানে গিয়েই দেখা হয় গ্রাহক রোহানের সঙ্গে। পণ্য সংগ্রহ করতে তাঁর এক মিনিটের মতো সময় লাগল। প্রথমবারের অভিজ্ঞতায় তিনি অভিভূত। শিক্ষার্থী রোহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন প্রযুক্তি। বেশ ভালো লাগল। কাউকে কিছু বলতেও হয়নি, জিজ্ঞেসও করতে হয়নি। ঝামেলা ছাড়াই নিয়ে নিলাম।’
যেভাবে কাজ করে ডিজিবক্স
এটুআইয়ের ই–কমার্স প্ল্যাটফর্ম একশপ। ডিজিবক্স তাদেরই উদ্যোগ। একশপের এই উদ্যোগ দারাজ ব্যবহার করছে। দারাজ থেকে কোনো পণ্য অর্ডার করার সময়ই অপশন দেখাবে গ্রাহক পণ্যটি নিজ গন্তব্যে চান নাকি ডিজিবক্স থেকে সংগ্রহ করতে চান। গ্রাহক ডিজিবক্স অপশন চাইলে ই–কমার্স প্ল্যাটফর্ম থেকে রাইডার বা ডেলিভারিম্যান পণ্য ওই গ্রাহকের নিকটস্থ ডিজিবক্সে রেখে যাবেন। গ্রাহক তখন একটি এসএমএস পাবেন। এবার পণ্য গ্রাহকের জন্য অপেক্ষা করতে থাকবে। গ্রাহক ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সুবিধাজনক সময়ে পণ্য সংগ্রহ করতে পারবেন।
ডিজিবক্সে প্রায় এটিএম বুথের স্ক্রিনের মতোই একটি স্ক্রিন রয়েছে। সেখানে ‘রাইডার’ ও ‘কাস্টমার’ নামে দুটি অপশন। ডেলিভারিম্যান যখন পণ্য রাখতে যাবেন, তখন রাইডার অপশন ব্যবহার করবে। অন্যদিকে গ্রাহকের জন্য কাস্টমার অপশন। সেখানে ই–মেইল বা মোবাইল নম্বর দিলে একটি ওটিপি কোড আসবে মেইলে বা মুঠোফোন নম্বরে। সেই কোড দিলে গ্রাহকের রাখা পণ্যের বক্সটি খুলে যাবে। গ্রাহক পণ্য সংগ্রহ করবেন।
ডিজিবক্সের এই সেবা এখন পর্যন্ত অগ্রিম পরিশোধের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে পরবর্তী সময়ে ক্যাশ অন ডেলিভারির সুবিধাও রাখা হবে। ফি সর্বোচ্চ ১৫ টাকা।
এটুআইয়ের প্রকল্প পরিচালক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, অ্যামাজনের গো লকার, আলিবাবার ড্রপবক্সের ধারণা থেকেই এ উদ্যোগ। স্থানীয় প্রযুক্তিতেই তৈরি হয়েছে ডিজিবক্স, অর্থাৎ সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার দুটোই দেশের। কম খরচে, দ্রুত সেবা দিতেই ও উদ্যোগ। ট্র্যাকিং সুবিধাও থাকছে। ই–কমার্স খাতে গ্রাহকের আস্থা আরও বাড়াতে এ উদ্যোগ সহায়তা করবে বলে তিনি আশা করেন।
গ্রাহকের দোরগোড়ায় পণ্য পৌঁছে যাবে, এটাই সবার প্রত্যাশা। সেখানে গ্রাহক কেন ডিজিবক্সে গিয়ে পণ্য নিতে আগ্রহী হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে এটুআইয়ের প্রকল্প পরিচালক প্রথম আলোকে বলেন, পণ্য পৌঁছানোর জন্য ঠিকানা কেউ অফিস দেয়, কেউ বাসা দেয়। ডেলিভারিম্যান যখন পণ্য নিয়ে যাবেন, সে মুহূর্তে গ্রাহক সেই গন্তব্যে না–ও থাকতে পারেন। পণ্যটি সংগ্রহ করার কেউ না থাকলে ডেলিভারিম্যানকে ফেরত যেতে হয়। এই ঝক্কি থেকে মুক্তি দেবে ডিজিবক্স। গ্রাহক তাঁর সুবিধামতো সময়ে গিয়ে পণ্য সংগ্রহ করতে পারবেন।
ডিজিবক্সে প্রায় এটিএম বুথের স্ক্রিনের মতোই একটি স্ক্রিন রয়েছে। সেখানে ‘রাইডার’ ও ‘কাস্টমার’ নামে দুটি অপশন। ডেলিভারিম্যান যখন পণ্য রাখতে যাবেন, তখন রাইডার অপশন ব্যবহার করবে। অন্যদিকে গ্রাহকের জন্য কাস্টমার অপশন। সেখানে ই–মেইল বা মোবাইল নম্বর দিলে একটি ওটিপি কোড আসবে মেইলে বা মুঠোফোন নম্বরে। সেই কোড দিলে গ্রাহকের রাখা পণ্যের বক্সটি খুলে যাবে। গ্রাহক পণ্য সংগ্রহ করবেন।
এটুআই জানিয়েছে, দারাজকে নিয়েই এ উদ্যোগের যাত্রা শুরু হয়েছে। তবে দেশের অন্য ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানও চাইলে ডিজিবক্স সেবায় যুক্ত হতে পারবে। মাসখানেক আগে এ সেবা ট্রায়াল হিসেবে চালু হয়। তাতে এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজারের বেশি পণ্য ডেলিভারি হয়েছে।
দারাজ বাংলাদেশের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার এ এইচ এম হাসিনুল কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, গ্রাহকের জীবনযাত্রাকে সহজ করাই ই–কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোর উদ্দেশ্য। এটুআইয়ের ডিজিবক্সের উদ্যোগে যুক্ত হওয়ায় গ্রাহকের পণ্য পাওয়া এখন আরও সহজ হয়েছে। প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টাই গ্রাহক তাঁর পণ্য ডিজিবক্স থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। এতে সময়ের বাধা থাকছে না এবং খরচও কম হচ্ছে।
একশপের যাত্রা শুরু হয় ২০১৯ সালে। সে বছর থেকেই ডিজিবক্স নিয়ে কাজ শুরু হয়। এটুআই জানায়, ডিজিবক্স সিসিটিভি ক্যামেরার আওতাভুক্ত। কোনো প্রযুক্তিগত সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে সিগন্যাল চলে যাবে কর্তৃপক্ষের কাছে। তারা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
ডিজিবক্স থেকে এখন শুধু পণ্য সংগ্রহ করা যাচ্ছে। তবে অর্ডার করা পণ্য নিয়ে কোনো সমস্যা থাকলে গ্রাহক যদি তা ফেরত দিতে চান, সে সুবিধাও আসবে। এটুআইয়ের হেড অব ই–কমার্স রেজওয়ানুল হক প্রথম আলোকে বলেন, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ডিজিবক্সে ‘রিটার্ন’ অপশন চালু হবে। গ্রাহক যেভাবে পণ্য সংগ্রহ করবেন, সেই একই পদ্ধতি পণ্য ফেরত দিতে পারবেন। তিনি আরও জানান, ফুড ডেলিভারি, লন্ড্রি সেবাও ডিজিবক্স ধরনের প্ল্যাটফর্মের আওতায় আসবে।
বর্তমানে ঢাকার জিগাতলা, মোহাম্মদপুর, আইসিটি ভবন, পূর্বাচল, গুলশান–২ ও তেজগাঁওয়ে এবং চট্টগ্রামে আগ্রাবাদ হোটেলের নিচে ডিজিবক্স চালু আছে। একেকটি পয়েন্ট থেকে দিনে ৩০০ গ্রাহককে সেবা দেওয়া যায়। গ্রাহক চাহিদা বুঝে আরও বিভিন্ন জায়গায় এই বক্স বসবে বলে জানিয়েছে এটুআই। সারা দেশে এক হাজারের বেশি ডিজিবক্স চালুর পরিকল্পনা আছে তাদের।