Connect with us

More

দৈনন্দিন জীবনে মাথাব্যথা

Published

on

05e557e92d5b3f9ca8b7759af490117a scaled

‘প্রথম আলো’র স্বাস্থ্যবিষয়ক নিয়মিত আয়োজনের অংশ হিসেবে মাথাব্যথার নানা দিক নিয়ে হয়ে গেল অনলাইন আলোচনা ‘মাথা নিয়ে মাথাব্যথা’র তৃতীয় ও শেষ পর্ব। ‘মাইগ্রেন মাথাব্যথা সচেতনতা সপ্তাহ ২০২২’ উপলক্ষে অত্যন্ত জরুরি বিষয়টি নিয়ে সময়োপযোগী এ আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে সার্বিক সহযোগিতা করে মাইগ্রেনসহ অন্যান্য মাথাব্যথার ওষুধ টাফনিল, ডিটান জেনেরিক উপাদানযুক্ত মাইগ্রেন চিকিৎসায় ব্যবহৃত প্রথম ওষুধ লাসমি এবং মাইগ্রেনের চিকিৎসা ও প্রতিরোধে কার্যকর ওষুধ নোরিয়াম প্রস্তুতকারক ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি এসকেএফ।

আলোচনার সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিলেন সুস্মিতা শ্রুতি চৌধুরী। আলোচক হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সের নিউরোলজি বিশেষজ্ঞ এম এস জহিরুল হক চৌধুরী ও কণ্ঠশিল্পী সাজিয়া সুলতানা পুতুল।

মাথাব্যথা অত্যন্ত সাধারণ ও সর্বজনীন একটা সমস্যা। প্রায়ই রোগীরা মাথাব্যথার জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। বিভিন্ন ধরনের মাথাব্যথার রয়েছে বিভিন্ন লক্ষণ। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক এম এস জহিরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘রোগীরা শুধু সাধারণভাবে মাথাব্যথার কথা না বলে যদি আরেকটু বিশদভাবে অন্য প্রাসঙ্গিক তথ্য এবং লক্ষণগুলো বলেন, তাহলে চিকিৎসকদের পক্ষে রোগ নিরূপণ করা সহজ হয়। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসাও হয় কার্যকর। কয়েক প্রকার সাধারণ মাথাব্যথা হলো—টেনশন বা মাথার পেশি সংকোচনজনিত মাথাব্যথা, মাইগ্রেন ও ক্লাস্টার হেডেক।’

মাথাব্যথার অভিযোগ নিয়ে আসা রোগীর প্রায় ১১ শতাংশ মাইগ্রেন ও ৭০ শতাংশের টেনশন-টাইপ মাথাব্যথা। টেনশন-টাইপ মাথাব্যথা কাজের চাপ, লম্বা সময় ধরে চোখের কাজ, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি নানা কারণে হয়। দিনের শেষ দিকে বেড়ে যাওয়া এই ব্যথার সঙ্গে বমি হয় না। মাইগ্রেনের ব্যথা সাধারণত একদিক থেকে শুরু হয়, বমি বা বমিভাব থাকে। বংশগত মাথাব্যথার প্রবণতাও মাইগ্রেন নির্দেশ করে, অন্য মাথাব্যথায় যা হয় না। এদিকে মস্তিষ্কের কোনো প্রদাহ, সংক্রমণ, টিউমার বা রক্তক্ষরণজনিত কারণে হঠাৎ তীব্র ব্যথা হতে পারে। আবার জ্বরের সঙ্গে মাথাব্যথাও কোনো রোগের নির্দেশক হতে পারে। এভাবে আনুষঙ্গিক লক্ষণগুলো সহকারে চিকিৎসককে সবকিছু বুঝিয়ে বললে তা অনেক কার্যকর হয়।

ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী আরও বলেন, ‘চিকিৎকদেরও কাজের মধ্যে হঠাৎ মাইগ্রেন অ্যাটাক হতে পারে। চিকিৎসকসহ সব পেশার মানুষেরই লম্বা সময় ধরে পরিশ্রম করলে, অতিরিক্ত কাজের চাপ বা অন্যান্য বিভিন্ন সমস্যার কারণে দৈনন্দিন জীবনে হঠাৎ-ই মাথাব্যথা শুরু হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ব্যথা উপশমকারী ওষুধ মাথাব্যথার শুরুতেই খেয়ে নিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। আর পারলে মাইগ্রেনের রোগীদের বিভিন্ন উদ্দীপক এড়িয়ে চলা উচিত। অনেক ধরনের বদভ্যাসের কারণে মাথাব্যথা হতে পারে। মদ্যপান, ধূমপান, মাদক গ্রহণ ইত্যাদি থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকলে অনেকেরই মাথাব্যথার প্রকোপ কমে আসে।’

এ পর্যায়ে সংগীতশিল্পী সাজিয়া সুলতানা পুতুল বলেন, তিনি জীবনে কখনোই সেভাবে মাথাব্যথায় ভোগেননি। তাঁর বাবা এবং বংশের অনেকেরই মাইগ্রেন আছে, তবে তাঁর নেই। কিন্তু সম্প্রতি নতুন মা হওয়ার পর ঘুমের অনিয়ম, পরিশ্রম, মানসিক চাপ ইত্যাদি কারণে তাঁর মাথাব্যথার সমস্যা হচ্ছে। এ কথার সূত্র ধরে ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী বলেন, প্রসূতি ও স্তন্যদানকারী অনেক মায়েরই মাথাব্যথার সমস্যা হতে পারে।

সাজিয়া সুলতানা পুতুল এ-ও বলেন যে সন্তান প্রসবের দিন তাঁর প্রচণ্ড মাথাব্যথা করেছিল, যেমন আর কোনো দিন হয়নি। সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব ও মানসিক চাপই এর বড় কারণ।

দর্শকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন কারণে মাথাব্যথার সূচনা হতে পারে। এর ভেতর মানসিক চাপ, হতাশা, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি বড় কারণ। যে কারণে টেনশন-টাইপ মাথাব্যথা হয়। এ ছাড়া আবহাওয়ার তারতম্য, দীর্ঘ সময় রোদে থাকলে মাথাব্যথা করতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে চকলেট, কফি, মিষ্টিজাতীয় খাবার, ফাস্টফুড ইত্যাদি মাইগ্রেনের সূচনা করতে পারে। ঠিক তেমনি লম্বা সময় ধরে ক্ষুধা ও তৃষ্ণা লাগলে মাথাব্যথা করে।

এক দর্শকের প্রশ্নের জবাবে ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘যাত্রাপথে অনেকের মাথাব্যথা হয়। সে ক্ষেত্রে অ্যাবর্টিভ ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করলে ভালো ফল মেলে। যদি কারও প্রায়ই দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র মাথাব্যথা হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নিলে অনেকটা সুস্থ থাকা যায়। তেমনি প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করলেও জীবন অনেকটা সহজ হয়ে যায়। সঠিক ব্যবস্থাপনা ও জীবনযাপনে শৃঙ্খলা আনলে মাথাব্যথার সমস্যা নিয়েও ভালোভাবে বাঁচা সম্ভব।

আরেক দর্শকের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী বলেন, কারও কারও ঘুম থেকে জেগেও মাথাব্যথা অনুভূত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রধান কারণ হচ্ছে, ঘুম পর্যাপ্ত না হওয়া বা ঘুম ভালো না হওয়া। ঘুমের আগে ক্যাফেইনযুক্ত গরম পানীয় পান, লাইট জ্বালিয়ে ঘুমানো বা বিছানায় লম্বা সময় ধরে মুঠোফোন ব্যবহার ইত্যাদি কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে মাথাব্যথা হতে পারে। এ জন্য পরিপাটি বিছানায়, আলো নিভিয়ে মানসিক প্রস্তুতি সহকারে ঘুমাতে যেতে হবে।

Advertisement

Trending