রিয়াল মাদ্রিদ না লিভারপুল—এমবাপ্পেকে এক শিশুর প্রশ্ন

কিলিয়ান এমবাপ্পের সঙ্গে গত মে মাসে পিএসজি তিন বছরের নতুন চুক্তির পর সবাই ভেবে নিয়েছিলেন, দলবদলে ফরাসি তারকাকে নিয়ে আলাপ–আলোচনা বোধ হয় শেষ হলো। ভুল।

ইউরোপিয়ান সংবাদমাধ্যম কিছুদিন আগে জানিয়েছে, জানুয়ারির দলবদলেই পিএসজি ছাড়তে চান এমবাপ্পে। ফরাসি ক্লাবটির কর্মকাণ্ডে নাকি অসন্তুষ্ট ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপজয়ী এ ফরোয়ার্ড। এবার নতুন খবর জানাল ফ্রান্সের সংবাদমাধ্যম ‘লেকিপ’—এমবাপ্পে এবং তাঁর কাছের লোকজন মনে করেন ‘ক্লাবকে (পিএসজি) আবারও বিশ্বাস করা অসম্ভব।’

লেকিপের বরাত দিয়ে এ উদ্ধৃতি প্রকাশ করেছে স্পেনের সংবাদমাধ্যম ‘মার্কা।’ তবে এর আগে পিএসজির কোচ ক্রিস্তোফ গালতিয়ের এবং ক্রীড়া পরিচালক লুইস কাম্পোস ক্লাবে এমবাপ্পে অসুখী থাকার খবর অস্বীকার করেন। কিন্তু সময়ে গড়িয়ে চলার সঙ্গে পিএসজিতে এমবাপ্পেকে নিয়ে জটিলতার ভেতরকার খবরও বের করে আনছে সংবাদমাধ্যম।

মার্কা জানিয়েছে, এমবাপ্পে মনে করেন পিএসজি তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবং তাঁর সঙ্গে নতুন চুক্তিতে যেসব বিষয় ছিল সেসব আলোর মুখ দেখবে না।

পিএসজি এমবাপ্পের অসন্তোষের খবর জানে এবং তাঁর দামও নাকি ঠিক করা হয়েছে। ক্লাবের এক সূত্র মারফত এর আগে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘টেলিগ্রাফ’ জানিয়েছিল, এমবাপ্পে ২৬৩-৩০৬ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ৩৫ কোটি ইউরো) মানের খেলোয়াড়। আর শর্ত হলো, ২৩ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড কখনোই রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিতে পারবেন না।

এর আগে গত দুই মৌসুম তাঁকে কেনার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেছে রিয়াল। এ ছাড়া লিভারপুলের নামও উঠে এসেছিল। ইংলিশ ক্লাবটির ব্যাপারে নিজের মায়ের বিশেষ আগ্রহের কথা এমবাপ্পে নিজেই জানিয়েছিলেন।

গত বুধবার নিজের ফাউন্ডেশন ‘ইনস্পায়ার্ড বাই কেএম’–এর পক্ষ থেকে কিছু শিশুর সঙ্গে আড্ডা দেন এমবাপ্পে। সংবাদমাধ্যম ‘আরএমসি স্পোর্ত’ জানিয়েছে, সেখানে এক শিশু এমবাপ্পের কাছে জানতে চান, রিয়াল ও লিভারপুলের মধ্যে তিনি কোন দলে যোগদান করবেন?

আয়োজকেরা তৎক্ষণাৎ মাইক্রোফোনে ঘোষণা করেন, এমবাপ্পে নিজের ভবিষ্যত নিয়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর দেবেন না। এমবাপ্পেও সেই শিশুর প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি। আরএমসি স্পোর্ত ফ্রান্সের অনুসন্ধানী অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘মিডিয়াপার্ট’–এর বরাত দিয়ে আরও জানিয়েছে, এমবাপ্পে ও সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চালাতে এবং তাঁর ইমেজ ক্ষুণ্ন করতে পিএসজি নাকি একটি এজেন্সির সঙ্গে আঁতাত করেছে।

মার্কা জানিয়েছে, এসব ঘটনার কারণেই এমবাপ্পে নাকি আর পিএসজির ওপর বিশ্বাস রাখতে পারছেন না। লু্ইস কাম্পোস গত পরশু পিএসজির অনুশীলনকেন্দ্র ক্যাম্প দে লোগেসে এমবাপ্পের সঙ্গে বৈঠকে বসে তাঁর অসন্তোষের কথা শুনেছেন। এদিকে এমবাপ্পের মা লামারি ফাইজাও বসে নেই। লেকিপ জানিয়েছে, পিএসজি যে এমবাপ্পের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছে, তা নিয়ে এক ভক্তের টুইট রি–টুইট করেন ফাইজা।

মিডিয়াপার্ট এর আগে জানিয়েছিল, ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে এমবাপ্পের বিরুদ্ধে এই প্রচারণা নাকি তিন বছর আগেই শুরু করা হয়, যখন (২০১৮–১৯ মৌসুমের শেষে) পিএসজি ছাড়তে চেয়েছিলেন এমবাপ্পে।

তবে পিএসজি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ক্লাবটির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মিডিয়াপার্টের অভিযোগ শক্তভাবে অস্বীকার করছে পিএসজি। পিএসজি একটি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন এজেন্সিকে সঙ্গে নিয়ে ক্লাব ও খেলোয়াড়দের বিভিন্ন অর্জন উদ্‌যাপন করে। কারও ক্ষতি করতে ক্লাব কখনো কোনো এজেন্সির দ্বারস্থ হয়নি।’ কিন্তু ‘ইউরেপুটেশন’ নামে সেই এজেন্সির সাবেক পরিচালক ফ্রেদেরিক গেল্দফের উদ্ধৃতি প্রকাশ করেছে মার্কা, ‘পিএসজির তরফ থেকে আমাদের চিনতে না পারার বিষয়টি অবিশ্বাস্য।’

এমবাপ্পে নিজে এই জটিলতা নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কথা বলেননি। পিএসজির ড্রেসিংরুমেও তাঁকে নিয়ে অসন্তুষ্টি আছে সতীর্থ ও স্টাফদের মধ্যে। ড্রেসিংরুমে এমবাপ্পে নাকি সমর্থন হারাচ্ছেন। নতুন চুক্তিতে তাঁকে যেসব সুযোগ–সুবিধা ও স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, তাতে নাকি পিএসজির কর্মীরা খুশি নন। লেকিপ জানিয়েছে, পিএসজির ড্রেসিংরুমের ‘মেরুদণ্ড’ হিসেবে পরিচিত তিন দক্ষিণ আমেরিকান নেইমার, লিওনেল মেসি ও মারকিনিওস নাকি এমবাপ্পের ওপর নাখোশ। আশরাফ হাকিমি, প্রেসনেল কিমপেম্বে এমনকি কোচ গালতিয়েরও নাকি এমবাপ্পেকে নিয়ে বিরক্ত।

তাঁর আচরণ নিয়ে পিএসজির এক কর্মীর উদ্ধৃতি প্রকাশ করেছে মার্কা, ‘ক্যাম্প দে লোগেসে এসে সে কোনোদিন হয়তো হাসিমুখে সবার সঙ্গে কথা বলবে, কুশল বিনিময় করবে। কিন্তু অন্যদিন কিছুই বলবে না, কাউকে পাত্তাও দেবে না। মৌসুমের শুরু থেকেই এমন দেখা যাচ্ছে।’

এখন এমবাপ্পে নিজে মুখ খুললেই জটিলতার অবসান হয়।